বিলেতে বাড়ি কেনাবেচাঃকেন বাই টু লেট প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করবেন (পর্ব-৯২)

বিলেতে প্রপার্টি ক্রয় করে/পরিবর্তন করে বাই টু লেট প্রপার্টি হিসেবে  ভাড়া দেয়া একটি লাভজনক বিনিয়োগ। এই ধরনের প্রপার্টিকে বলা হয় বাই টু লেট  প্রপার্টি এবং যিনি এই প্রপার্টি ক্রয় ও ভাড়া দেন তাকে বলা হয় বাই টু লেট  ল্যান্ডলর্ড। বিলেতে বাই টু লেট প্রপার্টিতে বিনিয়োগ এবং ল্যান্ডলর্ড  সংখ্যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ’ইংলিশ হাউজিং সার্ভে ২০২০-২১’ এর  রিপোর্ট অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে মোট ৪.৪ মিলিয়ন হাউসহোল্ড ব্যক্তি মালিকানাধীন  বাই টু লেট প্রপার্টিতে বসবাস করে, যা ইংল্যান্ডের মোট হাউসহোল্ড এর এক  পঞ্চমাংশ এবং ইংল্যান্ডে বাই টু লেট প্রপার্টির ২০% ব্যক্তি মালিকানাধীন  প্রপার্টি। হোমলেট রেন্টাল ইনডেক্স এর জরিপ অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২২ সালে  গ্রেট ব্রিটেনে প্রপার্টির এভারেজ রেন্ট ছিল ১১৭৪ পাউন্ড এবং ফেব্রুয়ারি  ২০২২ সালে ব্রিটেনের মাসিক এভারেজ রেন্ট ছিল £১,০৬৯। ব্রিটিশ সরকারের  ল্যান্ডরেজিস্ট্রী কর্তৃক প্রকাশিত ’ইউকে হাউস প্রাইস ইনডেক্স’ অনুযায়ী,  নভেম্বর ২০২২ সালে গ্রেট ব্রিটেনে প্রপার্টির এভারেজ মূল্য ছিল ২৯৪,৯১০  পাউন্ড এবং জুন ২০২২ সালে ব্রিটেনের এভারেজ প্রপার্টি মূল্য ছিল £২৮৬,৩৯৭।

কেন বাই টু লেট প্রপার্টিতে বিনিয়োগ করবেনঃ

দৃশ্যমান এবং স্থায়ী সম্পদঃ বাই টু লেট  প্রপার্টি হল একটি দৃশ্যমান, স্পর্শ করা যায় এবং স্থায়ী সম্পদ। বাই টু লেট  প্রপার্টি সহজে ব্যক্তিগতভাবে অথবা লেটিং এজেন্ট এর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা  করা যায়। অন্যদিকে স্টক এবং শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ দৃশ্যমান নয় এবং  ব্যবস্থাপনার জন্য শেয়ার মার্কেট অথবা ব্রোকারেজ হাউজের প্রয়োজন হয়।

পোর্টফলিও বৈচিত্রাঃ গ্রেট ব্রিটেনে  প্রপার্টির মূল্য প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিলেতের প্রপার্টি মার্কেটে  বিনিয়োগ করার মাধ্যমে একজন বিনিয়োগকারী একদিকে যেমন তার পোর্টফলিওর মধ্যে  বৈচিত্রা আনতে পারবেন অন্যদিকে তার বিনিয়োগের ঝুঁকি কমে আসবে এবং প্রপার্টি  একটি স্থায়ী সম্পদ হওয়ার কারণে তার বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে ফিনান্সিয়ালী  স্টাবল হবে।

মূলধন বৃদ্ধি এবং ইনফ্লেশনঃ ইনফ্লেশন এর  কারণে পাউন্ড এর মূল্য কমে যায়। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, গ্রেট ব্রিটেনে  প্রপার্টির মূল্য প্রতি বছরই বৃদ্ধি পায়। প্রপার্টি মার্কেটে বিনিয়োগ করলে  সম্পদকে ইনফ্লেশন থেকে রক্ষা করা যায়। এখন প্রপার্টি ক্রয় করার পর মূল্য  বৃদ্ধি পেলে, পরবর্তীতে প্রপার্টি বিক্রয় করে মূলধন বৃদ্ধি করা যায়।

বাই টু লেট প্রপার্টির সংখ্যা বৃদ্ধিঃ  প্রপার্টি ক্রয় করা হল এক ধরণের বিনিয়োগ। প্রথম বাই টু লেট প্রপার্টি ক্রয়  করার ২ বছর বা ৫ বছর পর প্রপার্টির মূল্য বৃদ্ধি পেলে। এই প্রপার্টি  রি-মর্গেজ করে, রি-মর্গেজ এর টাকা ডিপোজিট হিসেবে ব্যবহার করে আরেকটি বাই  টু লেট প্রপার্টি ক্রয় করা যায়।

বাই টু লেট মর্গেজঃ বিলেতে মর্গেজ নিয়ে বাই  টু লেট প্রপার্টি ক্রয় করা যায়। বাই টু লেট মর্গেজ এ সর্বোচ্চ চারজন  একসাথে আবেদন করতে পারবে। মর্গেজ এর পরিমাণ নির্ভর করে মূলত প্রপার্টির  রেন্টাল ইনকাম এর উপর। এছাড়া মর্গেজ আবেদনকারীর ইনকাম, ট্যাক্স·স্ট্যাটাস,  মিনিমাম ডিল পিরিয়ড এগুলোও বিবেচনায় আনা হয় মর্গেজ এপ্লিকেশনে। বাই টু লেট  প্রপার্টির মূল্য পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেলে। প্রপার্টি রি-মর্গেজ করে, মূলধন  বৃদ্ধি করা যায়।

বাই টু লেট প্রপার্টির ল্যান্ডলর্ডদের যেসব বিসয় এর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে-

প্রপার্টি লাইসেন্স: বাই টু লেট প্রপার্টির জন্য ল্যান্ডলর্ড লাইসেন্স/ প্রপার্টি লাইসেন্স সংগ্রহ করুন।

কনসেন্ট টু লেট : আপনার মর্গেজ এডভাইজর এর  পরামর্শক্রমে আপনার মর্গেজ ল্যান্ডর এর নিকট হতে ‘কনসেন্ট টু লেট’ নিতে  হবে। ‘Consent to Let’ এর মাধ্যমে আপনার বর্তমান মর্গেজ অপরিবর্তিত রেখে  প্রপার্টি ভাড়া দিতে পারবেন অথবা বর্তমান রেসিডেন্সিয়াল মর্গেজকে বাই টু  লেট মর্গেজে পরিবর্তিত করতে পারবেন অথবা আপনার প্রপার্টির জন্য রি- মর্গেজ  /লেট টু বাই মর্গেজ করতে পারবেন।

এনার্জি এফিসিয়েন্ট সার্টিফিকেট (EPC): EPC  সার্টিফিকেট দ্বারা আপনার প্রপার্টিতে কি পরিমাণ এনার্জি খরচ হয় এবং আপনার  প্রপার্টি কতটা এনার্জি এফিসিয়েন্ট তার বিস্তারিত রিপোর্ট পাবেন। আপনার  প্রপার্টিকে A থেকে G এর মধ্যে একটি রেটিং করা হবে। আপনার EPC সার্টিফিকেট  এর মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত থাকবে। নতুন প্রপার্টি ক্রয়, বিক্রয় এবং ভাড়া  দেয়ার জন্য নুন্যতম E রেটিং এর EPC সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে। আপনার  প্রপার্টির Energy Performance Certificate (EPC) এর জন্য আপনার নিকটস্থ  Domestic Energy Assessor এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

সেফটি এবং সার্টিফিকেটঃ প্রপার্টি ভাড়া দেবার আগে সঠিকভাবে গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি এবং ফায়ার সেফটি এসেসমেণ্ট করান এবং যথাযথ ডকুমেন্ট সংগ্রহ করুন।

ল্যান্ডলর্ড ট্যাক্সঃ বাই টু লেট প্রপার্টি  ক্রয় করার পর প্রতিবছর একজন ল্যান্ডলর্ডকে বাৎসরিক ভাড়া এবং তার অন্যান্য  ইনকামের উপর ট্যাক্স দিতে হবে। প্রতি বছর HMRC থেকে এসএ৩০২ (SA302) এবং  ট্যাক্স ইয়ার ওভারভিউ সংগ্রহ করতে হবে।

টেন্যান্সি সমাপ্ত করাঃ কোন কারণে যদি আপনার  বাই টু লেট প্রপার্টির টেন্যান্সি সমাপ্ত করতে চান, আইন অনুযায়ী আপনাকে  তা করতে হবে। হাউসিং আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী একজন ল্যান্ডলর্ড হাউসিং আইন ১৯৮৮  এর সেকশন ৮ এবং ২১ নোটিশ এর মাধ্যমে টেন্যান্সি সমাপ্ত করতে পারবেন।

প্রপার্টি ব্যবস্থাপনাঃ একজন ল্যান্ডলর্ড  ব্যক্তিগতভাবে প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। যেমনঃ রেন্ট সংগ্রহ,  প্রপার্টি মেরামত, ইউটিলিটি লাইন ইত্যাদি। অথবা কোন টেন্যান্সি  ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি এর মাধ্যমে প্রপার্টি ব্যবস্থাপনা করতে পারেন। তবে  মর্গেজ নিয়ে প্রপার্টি ক্রয় করলে টেন্যান্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ  করার পূর্বে প্রপার্টির মাসিক রেন্ট, মাসিক মর্গেজ পেমেন্ট, মাসিক এজেন্সি  ফি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে নিতে হবে।

বাই টু লেট প্রপার্টির জন্য মর্গেজ

বিলেতে কেউ যদি ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোন প্রপার্টি কিনে থাকে এবং সে  ধরনের প্রপার্টির জন্য যে মর্গেজ দেওয়া হয়, তাকে বাই টু লেট মর্গেজ বলে।

বাই টু লেট মর্গেজ প্রক্রিয়ায় মিনিমাম ডিপোজিট এবং ইন্টারেস্ট রেট  রেসিডেন্সিয়াল মর্গেজ থেকে কিছুটা ভিন্নরকম হয়ে থাকে। বর্তমানে বেশিরভাগ  ব্যাংক সর্বোচ্চ ৭৫% পর্যন্ত বাই টু লেট মর্গেজ দিয়ে থাকে, তবে কয়েকটি  ব্যাংক ৮০% পর্যন্ত মর্গেজ দিয়ে থাকে। রেসিডেন্সিয়াল মর্গেজ এর চেয়ে বাই টু  লেট মর্গেজ এর ইন্টারেস্ট রেট বেশি হয়ে থাকে। বাই টু লেট মর্গেজ যেহেতু  ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়, তাই বেশির ভাগ সময় ইন্টারেস্ট অনলি  বেসিসে নেওয়া হয়। তবে কেউ চাইলে ক্যাপিটাল এবং ইন্টারেস্ট বেসিসে নিতে  পারবেন।

মর্গেজ এর পরিমান নির্ভর করে মূলত প্রপার্টির রেন্টাল ইনকাম এর উপর।  এছাড়া মর্গেজ আবেদনকারীর ইনকাম, ট্যাক্স·স্ট্যাটাস, মিনিমাম ডিল পিরিয়ড  এগুলোও বিবেচনায় আনা হয়। মর্গেজ এপ্লিকেশনে ।বাই টু লেট মর্গেজ পাওয়ার  ক্ষেত্রে মিনিমাম ইনকাম এর কোন বাধ্যকতা নেই। তবে অনেক ব্যাংক আছে যেখানে  আবেদন করতে হলে আপনার বাৎসরিক ইনকাম নূন্যতম ২৫ হাজার পাউন্ড হতে হবে।

কেউ যদি ফার্স্ট টাইম বাইয়ার হোন, তাহলে বেশির ভাগ ব্যাংক তাকে বাই টু  লেট মর্গেজ দিবে না।বাই টু লেট মর্গেজ নেওয়া হয় রেন্টাল প্রপার্টির জন্য,  অর্থাৎ এখানে আবেদনকারী বসবাস করতে পারবে না, শুধুমাত্র ভাড়া দিতে পারবে।  বাই টু লেট মর্গেজ এ সর্বোচ্চ চারজন একসাথে আবেদন করতে পারবে। বাই টু লেট  মর্গেজ ব্যক্তিগত নামে নেওয়া যায় অথবা কোন কোম্পানি গঠন করেও নেওয়া যায়।  কারো যদি নূন্যতম চারটি বাই টু লেট মর্গেজ প্রপার্টি থাকে, তাদেরকে বলা হয়  পোর্টফলিও ল্যান্ডলর্ড।

আপনার প্রপার্টির রেসিডেন্সিয়াল মর্গেজ আছে এবং আপনি এই প্রপার্টিকে বাই  টু লেট প্রপার্টিতে রূপান্তর করে ভাড়া দিতে চাচ্ছেন অথবা মর্গেজ নিয়ে বাই  টু লেট প্রপার্টি ক্রয় করতে চাচ্ছেন। এই সিদ্ধান্ত নেবার পর প্রথমেই একজন  অভিজ্ঞ মর্গেজ এডভাইজর এর সাথে পরামর্শ করুন। কারণ একজন মর্গেজ এডভাইজর  আপনার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিবে।

প্রপার্টি মার্কেট এবং মর্গেজ সংক্রান্ত যেকোন ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে নিচের ইমেইল অথবা টেলিফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে।

EMAIL: info@benecofinance.co.uk

PHONE: +4402080502478

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top